লিটু দেবনাথ, পটুয়াখালী।
প্রাকৃতিক ভাবেই গাছপালা পশুপাখি জীবজন্তুর সবার সহাবস্থানের কারণেই আমরা প্রকৃতিকে এতো ভালোবাসি। পৃথিবীর সব মানুষই কম বেশি ফুল ভালোবাসেন। আশেপাশের কোনো ফুলেরবাগানে গোলাপ, শাপলা, লিলি, বেলী ছাড়াও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অদ্ভুত কিছু ফুল দেখা যায়। ফুলের মাঝে আছে প্রেম, আনন্দ, বেদনার, নানা ছবি।
পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার পুরান মহিপুরে, কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে শেখ জামাল টোলপ্লাজার সামনের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই দৃষ্টি কাড়ে লম্বাটে একধরনের হলুদ রঙের ফুল। মনে হচ্ছিল যেন আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। ঝোপের মাঝে এই সম্মিলিত ফুলগুলোর সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতোই। সুবিন্যস্ত পাতাও চোখ এড়ানোর নয়। ক্যামেরবন্দী করতে ভুল করলাম না ।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক, (উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ) মোসাঃ সেলিনা আকতারের কাছে ফুল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল এর জন্মবৃত্তান্ত। ‘দাদমর্দন’ নামেই এই গাছ সর্বাধিক পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম ( Senna alata ) । ইংরেজি নাম ( Candle Bush ) ।এটি মূলত নরম কাণ্ঠল গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এদের ক্যাশিয়া জাতের ফুল ফুটে। এর পাতা অনেকটা পেয়ারা গাছের পাতার মতো কিন্তু আগার দিকে একটু ভোতা এবং চওরা অনেকটাই বেশি। যা পৌষ্পিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বা ঔষধি গাছ হিসেবে সংরক্ষণের প্রয়োজনে বিভিন্ন উদ্যানে রোপণ করা হয়। ময়লা-আবর্জনায় কিংবা পথের ধারে, অযত্নে অবহেলায় পরিত্যক্ত স্থানে আপনা আপনিই জন্মে।
দাদমর্দনের উৎপত্তি
দাদমর্দনের আদি নিবাস মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা। আলংকারিক পুষ্পবৃক্ষের জন্যই বিভিন্ন উদ্যানে রোপণ করা হয়। এরা ক্যাশিয়া জাতের ফুল। ক্যাশিয়ার আরেকটি বুনো জাতের নাম কালকাসুন্দা। পথের ধারে ও পাহাড়ে অঢেল দেখা যায়। দাদমর্দন কখনো কখনো ডোবার ধারে, খেতের মধ্যবর্তী আল এবং অনাবাদি স্থানেও জন্মায়।
দাদমর্দনের ব্যবহার
ঔষধি গাছ হিসেবে ‘দাদমর্দন’ সারা দেশে মূলত ঔষধি গাছ হিসেবেই এরা পরিচিত। উদ্ভিদটির নামের মাঝেই এর মাহাত্ম লুকিয়ে আছে। বিশেষ করে চর্মরোগে এই গাছ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে দাদ ও পাঁচড়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার্য। দাদের বাহ্যিক নিরাময়ের জন্য টাটকা পাতার লেই ব্যবহার করা হয়। আবার ঝলসানো পাতাও রেচক। এসব ছাড়াও যৌনরোগ চিকিৎসায় এবং বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে এই গাছ সাধারণত টনিক হিসেবে কাজে লাগে।মেছতার দাগ নির্মূলে দাদমর্দনের সুফল পাওয়া যায়।
দাদমর্দনের আকার
দাদমর্দন দ্রুত বর্ধনশীল নরম-কাষ্ঠল গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার মৌসুম। সাধারণত এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। কাণ্ড পুরু ও হলদেটে। ডালের আগায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার খাড়া ডাঁটায় হলুদ রঙের ফুল নিচ থেকে ওপরের দিকে ফোটে। ফুলের পর ফল আসে। চিকন লম্বাটে ফল হয়। একটি ফলে প্রচুর বীজ থাকে। ফল পুষ্ট হয়ে ফেটে ঝরে পড়ে। সেখান থেকে সহজেই চারা জন্মে। গাছে কোনো সুমিষ্ট ফল হয় না, কাঠও মূল্যহীন।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক, (উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের) মোসাঃ সেলিনা আকতারের বলেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে কিছু কিছু জায়গায়, বিশেষ করে কুয়াকাটায় বেশী দেখতে পাওয়া যায়। পটুয়াখালী-কুয়াকাটার মহাসড়কের দুই পাশে বেশী দেখতে পাওয়া যায়।
এই গাছের পাতায় এসিড জাতীয় উপাদান থাকায় এর পাতা দাদ এবং চর্ম রোগে ব্যবহার করা হয়। দাদ ও পাঁচড়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার্য এই উদ্ভিদ। দাদের বাহ্যিক নিরাময়ের জন্য টাটকা পাতার লেই ব্যবহার করা হয়। যৌনরোগ চিকিৎসায় এবং বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে এই গাছের পাতা ও ফুল টনিক হিসেবে কাজে লাগে। ভাটের পুষ্পের রস কৃমিনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। দাদমর্দন গাছের পাতা বেটে খোসপাঁচড়া, দাদ, চুলকানি হওয়া জায়গায় ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে এক সপ্তাহ লাগালে, রোগ থেকে নিরাময় হয়।